আজ ৭১ এর কাল রাত

লেখক: ফয়সাল মিয়া, কুবি
প্রকাশ: ২ years ago

১৯৭১ সালে এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নিরীহ,নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, কৃষক, ইপিআর বাহিনী ও সাধারণ মানুষকে। যা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। দেশে প্রতি বছর দিনটি যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেনি বিশ্ব। ২৫ শে মার্চের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে। পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ণ সামরিক অস্ত্র নিয়ে রাত ১০টার পর দেশ জুড়ে শুরু করে এই জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাঙালি হত্যার নৃশংস নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে পা বাড়ান।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নির্মম গণহত্যা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির উপর।বিভিন্ন এলাকাতে নির্বিচার হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান—‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন-চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান এবং তৎকালীন সময়ের মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। এর মাধ্যমেই প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। ৩০ লক্ষ প্রাণ ও ২ লক্ষ মায়ের ইজ্জতের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ২৬ শে মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় র‍্যালি, র‍্যালি শেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও হলগুলোতে ইফতার বিতরণ করা হবে এছাড়াও সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।