শালবন বিহার আর ময়নামতির লাল মাটির ধুলো মাখা ঐতিহ্যের কোলে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ও লাল মাটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। লাল মাটি আর ছোট-বড় টিলায় ঘেরা ৫০ একরের এই ক্যাম্পাসটি যেন স্রষ্টার নিপুণ হাতে আঁকা এক নন্দনকানন।এখানে প্রকৃতির সাথে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিবিড় সখ্যতা।ঋতুচক্রের আবর্তনে ছয়টি ঋতু এখানে আসে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা নিয়ে,প্রতিটি ঋতুতেই ক্যাম্পাস নতুন রূপে,নতুন সাজে সেজে ওঠে।ঋতুর মায়াজালে এবারও এসেছে শীতের কুয়াশা।কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে মোড়ানো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে ঠান্ডার আবহ।
কুয়াশার চাদর ও পিঠা উৎসবের আমেজ পৌষ-মাঘের শীতে কুয়াশার চাদরে মুড়ি দেয় পুরো ক্যাম্পাস। শীতের আসল সৌন্দর্য ধরা দেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখি চত্বরে। ঘন কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্যের নরম আলো মাটিতে এসে পড়ে, তখন গাছের পাতার ফাঁক গলে তৈরি হয় ‘টিণ্ডাল এফেক্ট’ বা আলোর রোমাঞ্চকর রেখা। শীতকাল মানেই ক্যাম্পাসে উৎসবের ধুম। মাঝে মাঝে শীতের সন্ধ্যায় চায়ের কাপে জমে ওঠে গল্প আর আড্ডার উষ্ণতা। প্রতিবছর শীতে পিঠা উৎসবের আয়োজন থাকলেও এ বছর এখনো শুরু হয়নি,কিন্তু থেমে নেই পিঠার যাত্রা,সন্ধ্যার পিঠার গন্ধে ক্যাম্পাস রোডে ছড়িয়ে পড়ে এক বিশেষ আনন্দ। সন্ধ্যা শেষে লাইটের আলোয় ব্যাডমিন্টন কোর্টে চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। শীতের রাতে ক্যাম্পফায়ার আর গিটারে টুংটাং শব্দে উষ্ণ হয়ে ওঠে হিমশীতল পরিবেশ। এই সময়টাতেই ক্যাম্পাসের সিনিয়র – জুনিয়রদের সামাজিক বন্ধনগুলো আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে, সাথে থাকে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চোখ ধাঁধানো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ।
এই সময়টির রয়েছে এক আলাদা শান্তি; পাখিদের কিচিরমিচির আর ঠাণ্ডা বাতাস মিলে তৈরি করে ভোরবেলার এক অদ্ভুত প্রশান্তি। ক্লাসে যেতে যেতে শিক্ষার্থীদের মুখে উষ্ণ চায়ের কাপের ধোঁয়া, গলায় জড়ানো মাফলার সব মিলিয়ে শীতের প্রথম ছোঁয়া যেন নতুন এক ছন্দ বয়ে আনে সবার জীবনে।
শীতের আগমন মানে কুবি ক্যাম্পাসে জমে ওঠে নানা আয়োজন। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সকালের কুয়াশা উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ে শীতপ্রেমীরা। ক্লাস শেষে বিকেলের নরম আলোয় দলে দলে শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে। আর সন্ধ্যা নামলে ক্যাম্পাসের বাতাস আরও ঠাণ্ডা, আরও কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। তখন দেখা যায় টং দোকানে চায়ের কাপ হাতে বন্ধুমহলের আড্ডা কিংবা ভাপা ও চিতই পিঠার দোকানে ভিড়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যের জন্যই স্বতন্ত্র, আর শীত নামলে সেই সৌন্দর্য আরও গভীর ও আরও স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। লাল মাটির ক্যাম্পাসে শীত যেন এক নতুন রূপ–নীরব, শান্ত, স্নিগ্ধ; তবুও প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল ও স্মৃতিময়। শীতের এই আগমন তাই শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়; এটি হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায়, যা বছর শেষে আবার ফিরে আসে, কিন্তু স্মৃতিতে থেকে যায় চিরকাল।
মো:রাকিব হোসেন
শিক্ষার্থী,লোক প্রশাসন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

