লালমাটির ক্যাম্পাস নামে খ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি ক্যাম্পাসই নই এটি যেন প্রকৃতির এক অনন্য লীলাভূমি। যার অবস্থান ঢাকা এবং চট্রগ্রাম মহাসড়কের মাঝামাঝি। ক্যাম্পাসটিকে বেষ্টন করে আছে প্রকৃতির লীলাভূমি লালমাই পাহাড়। লাল মাটির সবুজ এই ক্যাম্পাসটির চারিদিকে ছোট-বড় পাহাড়ের হাতছানি, পাখির কিচিরমিচির শব্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের মনেও জাগিয়ে তোলে বিস্ময়কর এক অজানা অনুভূতি। লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে ঘিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মধ্য -পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ।আজ ২৮ মে মঙ্গলবার ১৯ তম বছরে পদার্পণ করেছে হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় উঁচু -নিচু পাহাড়, টিলা এবং সবুজের বুক চিরে নবদিগন্তের ন্যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০০৬ সালের ২৮ মে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে আপনাকে স্বাগত জানাবে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ,তার একটু পরেই আপনার মনে বিস্ময় জাগাবে ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ‘শালবন বিহার’, ‘বৌদ্ধ মন্দির’, ‘ময়নামতি জাদুঘর ‘।সেই সাথে ক্যাম্পাসের সন্নিকটে রযেছে ব্লু ওয়াটার পার্ক,ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে নিত্যদিন পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন স্যারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের লিডিং পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করাই এখন আমাদের অন্যতম ভিশন। আর তারই প্রত্যক্ষ সুফল বয়ে আনতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইউজিসির মতে- বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দশম। এছাড়াও সম্প্রতি প্রকাশিত সিমাগো Ranking -এ দেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অষ্টম । অধ্যাপক না থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম সমস্যা হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোনো প্রভাব নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা ৩৮ জনের অধিক এবং যা আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০০৬ সালের ২৮ মে মাত্র ৫০ একর জায়গা জুড়ে দৃষ্টনন্দন লাইমাই পাহাড়ের পাদদেশে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে দেশের ২৬ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে মেগা প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখন ২৫০ একরের কাজ চলমান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প পাস হওয়ার পর নতুন ক্যাম্পাসের কাজ পুরো উদ্যমে চলছে। ৭টি বিভাগে ৩০০ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক এবং ৫০ জন কর্মকর্তা -কর্মচারী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে এই বিদ্যাপীঠে ৬টি অনুষদের অধীন ১৯টি বিভাগে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে ।বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসহ দেশের বাইরেও বিরাজমান।হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন কুবির নীল এবং লাল বাস।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার্থে ৮টি নীল বাস এবং ৯টি বিআরটিসির লাল বাসসহ মোট ১৭ টি বাসে চলমান আছে।এছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা -কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র বাস,মিনিবাস এবং মাইক্রোবাস।বর্তমান ক্যাম্পাসটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পাঁচটি আবাসিক হল। তন্মধ্যে ছাত্রদের জন্য তিনটি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি আবাসিক হল।এছাড়াও শিক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্য রয়েছে ডরমিটরি এবং গেস্টহাউস।
বর্তমানে সেনাবাহিনীর অধীনে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ও সমতলে ২০০ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেখানে ১০ তলা বিশিষ্ট ৪টি একাডেমিক ভবন,৬ তলা বিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন,১০ তলা বিশিষ্ট ২টি ছাত্র এবং ২টি ছাত্রী হল,উপাচার্যের বাসভবন,১০ তলা বিশিষ্ট শিক্ষকদের একটি আবাসিক ভবন,১০ তলা বিশিষ্ট একটি ডরমিটরি, ১০ তলা বিশিষ্ট কর্মচারীদের একটি আবাসিক ভবন, একটি ৬ তলা বিশিষ্ট স্কুল ভবন, ৫ তলা বিশিষ্ট ১টি ছাত্র -শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), ৩ তলা বিশিষ্ট ১ হাজার আসনের ১টি মিলনায়তন, ৬ তলা বিশিষ্ট ১টি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র, শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ তলা বিশিষ্ট একটি মেডিকেল ও ডে কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ,দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস গেইট,স্মৃতিস্তম্ভ,ক্রীড়া কমপ্লেক্স, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও লেক খননের কাজ চলমান,একটি ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্স লাইব্রেরি। কুবির এই নতুন ক্যাম্পাস ২০২৫ সালের জুনের দিকে উদ্বোধন হবে বলে আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ এসব প্রকল্পের দরুন অতি শীঘ্রই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যা শিক্ষার্থীদের মনে বিষণ্নতার সঞ্চার করেছে।আশা করি অতি শীঘ্রই সকল সংকটের নিরসন কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তার চিরচেনা রূপে ফিরে আসবে এবং আনন্দে মুখরিত হবে আমাদের এই এই প্রাণের লালমাটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শুভ জন্মদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।