ব্যাচের সবাইকে একই রকম কথা বলার নির্দেশ দেওয়ায় কুবির শিক্ষার্থী বহিষ্কার

লেখক: কুবি প্রতিনিধি;
প্রকাশ: ২ মাস আগে
Oplus_131072

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দ্বারা ১৯তম ব্যাচকে র‍্যাগ দেওয়ার অভিযোগে ১৮তম আবর্তনের ২ জন শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার বহিষ্কার ও ১৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উপদেষ্টাকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলীর সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় এই সুপারিশ করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ১৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা ১৯তম আবর্তনকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসরুমে আটকিয়ে রাখা, ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো, সিনিয়র শিক্ষার্থীদের প্রপোজ করানো, মেয়ে শিক্ষার্থীদের নাচতে বাধ্য করা, বিভিন্ন প্রকার হুমকিসহ নানা ধরনের হয়রানি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুলাহ আরাফাত, আশিকুর রহমান ও শেখ সৌরভ উদ্দিন জয় ১৯তম ব্যাচের মাহজাবীন হিমিকে নিয়ে একসাথে লাঞ্চ শেষে চা খেতে গেলে ১৮তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি দেখে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে এবং আশিকুর রহমানকে নিয়মিত হেনস্থা এবং তাকে সিআর এর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে । এ ঘটনায় ১৮তম ব্যাচের আবদুল্লাহ আরাফাত মেসেঞ্জারে মাহজাবীন হিমিকে হুমকি ও অশালীন বার্তা প্রেরণ করে এবং তাদের নিজস্ব গ্রুপে অপমানজনক মন্তব্য করে। এতে হিমি মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেন। যদিও তিনি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে বহিষ্কৃত আব্দুল্লাহ আরাফাত বলেন, হিমি আমার জেলার হওয়ায় ওর সঙ্গে আমার ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়। কিন্তু হিমি এই স্ক্রিনশট আশিককে পাঠায়। এতে আমি বিব্রত হই। আমি এরপর হিমিকে রাগের মাথায় মেসেজ দিয়ে বলি যাতে আর কোনোদিন আমার সামনে না আসে।

অপমানের কারণেই কুবি ছেড়ে চলে গেছেন এমন বক্তব্যে মাহজাবিন হিমি বলেন, আমি আমার পার্সোনাল কারণে কুবি থেকে চলে এসেছি। র‍্যাগিংয়ের কারণে আমি কুবি ছাড়িনি।

হিমির বাবা মুজিবুর বলেন, আমার মেয়ে ছোট বেলা থেকেই ঢাকায় বড় হয়েছে। কুমিল্লায় মানিয়ে নিতে পারছে না তাই আমি ওকে ঢাকায় নিয়ে আসি। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৮তম ব্যাচের রিফা সানজিদা তাদের গ্রুপে নির্দেশ দেন যে, সবাই যেন শিক্ষকরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনা অস্বীকার করে এবং একই রকম বক্তব্য প্রদান করে। এর ফলশ্রুতিতে রিফাকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে রিফা বলেন, আমি ঘটনা অস্বীকার করতে বলিনি৷ আমাদের ব্যাচের সবাই যাতে একই রকম কথা বলে আমি তাই এটা বলেছি। আর ব্যাচের সবাই যাতে বলে আমরা ওদের কক্ষে পরিচিত হতে গিয়েছি।

ঠিক কি কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যসচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, এটা ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। মাহজাবিন হিমি র‍্যাগিংয়ের কারণেই কুবি ছেড়ে চলে গেছেন কিনা এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটা আহ্বায়ককে জিজ্ঞেস করেন।

তবে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, আমি প্রতিবেদনে সব উল্লেখ করেছি। আপনি শৃঙ্খলা কমিটির মুখপাত্র প্রক্টরকে জিজ্ঞেস করেন। আপনারা প্রতিবেদন লেখার আগে হিমির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করেছি এর বাইরে আর কিছু বলব না। এর বাইরে আর কিছু জানার থাকলে আপনি প্রক্টরকে জিজ্ঞেস করেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।