বাবা হলো সন্তানের ভ্রাম্যমান জীবনের ছায়া দানকারী বটবৃক্ষ

লেখক: হারিছ মিয়া, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ১ বছর আগে

যদি বলা হয়, তীব্র রৌদ্রে ভয়ংকর এক দীর্ঘ মরুভূমির পথ পারি দিয়ে আপনাকে অপর প্রান্তে পৌঁছতে হবে তাহলে অবশ্যই আপনি সেটা করতে হয়তো দ্বিধা বোধ করবেন।

কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই এমন একটা পথ রয়েছে যেটা একাকি পারি দিয়ে তার সফলতার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌছঁতে হয়।

যে মানুষটা তার মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মূহুর্তেও আপনার মঙ্গল কামনা করে যান, উত্তপ্ত মরুভূমিতে আপনার ভ্রম্যামান দেহের উপর সারাটা পথ জুড়ে বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে যান, তিনিই হলেন “বাবা”। বাবা এমন একটি বৃক্ষ যিনি আপনাকে নিরাপদে রাখার জন্য নিজের জীবনে কত শত ঝড়,তোফান,সাইক্লোন ইত্যাদির মত দুর্যোগের মোকাবিলা করে যান। আপনার সুখের জন্য তিনি তার জীবনের সকল ঘুম,ঘাম,আনন্দ,পরিশ্রম,ত্যাগ ইত্যাদিকে গুরুহীন করে তুলেন। আপনাকে নিয়ে তার একটাই স্বপ্ন ” আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।”
সেই বাবাকে ভালোবাসার কথা কখনো মুখে বলা হয়নি। বলা হয়নি তাকে কতখানি ভালোবাসি। যার বাবা বেঁচে আছে, সে–ই তো বড় ভাগ্যবান।

কিন্তু অনেক পরিতাপের বিষয় হলো- যে বাবাটি নিজের সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য ব্যাকুল থাকতেন। যিনি সন্তানের অনহারে নির্ঘুম রাত কাটাতেন, অসুস্থ হলে শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন,ঔষধ খাওয়াতেন। খাবার সময় নিজের প্লেটটা অপূর্ণ রেখে সন্তানের প্লেটটা মাছের বড় টুকরাটা দিয়ে পরিপূর্ণ করতেন। পড়াশোনার খরচটা সঠিকভাবে আদায় করার জন্য বিশ্রামের সময়টাও কাজ করে কাটিয়ে দিতেন। ঈদের সময় নিজে নতুন জামা না কিনে টাকা ধার করে হলেও পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কিনতেন। পুরাতন জামা গায়ে নিজে যেতেন ঈদগাহে। কত কিছুই না করেছেন আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে। সন্তানের কোন আবদার রাখেননি অপূর্ণ।

কিন্তু যখন বাবা একটু বৃদ্ধ হয়ে যায়। নিজেরা একটু বড় হই। বুঝতে শিখি দুনিয়াকে। তখনই ভুলে যাই মাথার ওপর সারাটা জীবন ছায়া দিতে থাকা সেই বাবা নামের বটবৃক্ষটিকে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়ে উঠি তার প্রতি। ভুলে যাই তার অতীতের সকল কর্মপ্রচেষ্টা।
তাকে রেখে আসছি বৃদ্ধাশ্রম নামক মানবতার নিকৃষ্ট কারাগারে। বাংলাদেশের মাটিতেও দিন দিন বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা। আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের বড় হওয়ার পেছনে তাঁদের ত্যাগের কথা। তাঁদের বিবেচনা করছি বিরক্তিকর পদার্থ বা বাড়তি ঝামেলা হিসেবে।

বাবা সাহিত্যের কোন উপাদান হতে পারে না, তিনি নিজেই একটি পূর্ণ ইতিহাস,উপন্যাস,কাব্য,প্রবন্ধ ও গল্প। তাকে নিয়ে কেউ লিখুক আর না লিখুক, বাবা হলো আমার দুচোখে দেখা পৃথিবীর সেরা মানব। তাই এই বৃদ্ধাশ্রম নামক মানবতার নিকৃষ্ট কারাগারের বিলুপ্ত হোক।
আমরা প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকি। বাবা দিবস বছরে মাত্র এক দিন যেন না হয়, বাবা দিবস হোক প্রতিদিন। বাবার প্রতি ভালোবাসা ফুঁটে উঠুক সন্তানের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি দিনে ও ক্ষনে।
“হে প্রভু আমাদের পিতা-মাতার প্রতি আপনি দয়া করুন,যেমনি ভাবে তারা আমাদের প্রতি শৈশবকালে দয়া করেছিলেন।”