গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

লেখক: হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ২ years ago

সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস,আবার বলা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। যেখানে রাজা সেখানেই তো প্রজার কথা আসে, তা হলে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস ঘোষণা দিয়ে আবার সে জনগণকে প্রজা বানিয়ে সংবিধান তার নিজের সাথে নিজেই ছলনা করেছে নিশ্চিত ভাবে।
একটা নির্বাচন এলে সে পাকিস্তান আমল থেকেই ভোটের পদ্ধতি নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা চলে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে, মাত্র নয় মাস যুদ্ধ করে একটা দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও গত বায়ান্ন বছর ধরে নির্বাচনের পদ্ধতিটায় নির্ধারন করা যাচ্ছে না কেনো? প্রশ্ন থেকে যায় এখানেও। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব যে, এটা বুঝতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হতে হবে না। সত্তুরের নির্বাচনে আওয়ামিলীগের বিজয়ের পর পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠী যখন বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে দিলো না তখন বাংলার মানুষ এটা মানতে পারলো না।

মুক্তিযোদ্ধের অনেকগুলো কারণ মধ্য অন্যতম ছিলো দুই পাকিস্তানের অর্থনীতিক বৈষম্য, উন্নয়ন বৈষম্য, সুশাসনের অভাব,সামরিক বাহিনীর খবরদারীসহ সর্ব ক্ষেত্রে বৈষম্যে এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত সত্তুরের নির্বাচন আওমীলীগের জয় ও সরকার গঠন করতে না পারা ছিলো একটি বড় ভূমিকা আমাদের মুক্তিযোদ্ধের।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মাঝে একানব্বই, ছিয়ানব্বই, দুইহাজার এক ও দুই হাজার আট সালের চারটি নির্বাচন বাদে আর একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়নি বলে ধারণা করা হয়। দেশ বিদেশে আজ আমাদের সাধারণ নির্বাচন বহুচর্চিত বিষয়! আমরা আজ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শুধু আমাদের নির্বাচনের খবর,যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একমাত্র মাথাব্যথা আমাদের নির্বাচন কেন্দ্রিক। রাশিয়া চীন ভারত ও আছে সে লাইনে কিন্তু আলাদা পথে।
ভাবতেই ভালো লাগে আমাদের নির্বাচন আজ বিশ্বের নির্বাচন,আন্তর্জাতিক ইসু! আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবোর মতো জনপ্রিয় গনতান্ত্রিক শ্লোগান দিয়ে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সে পচাত্তরের পরের সামরিক জান্তার আমল থেকে, হ্যা না ভোটের জনক জিয়ার সময়ে ভোট ব্যবস্থা ছিলো দশটি হোন্ডা বিশটি গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা পদ্ধতির,আর আরেক সামরিক জান্তা এরশাদ তার পূর্বসুরির নির্বাচন পদ্ধতিকে কার্বন কপি করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বারবার।

নব্বইয়ের তিন জোটের ঐক্যমত্তের বৃত্তিতে এলো তত্বাবাধায়ক সরকার ব্যাবস্থা।ততকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্তা। সে নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয় লাভ করে বেগম খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল বি এন পি,সে সরকারকে উৎখাত করতে আন্দোলনে নামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগসহ তার মিত্ররা। আবার নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্দোলন, চুরানব্বই থেকে ছিয়ানব্বই জুড়ে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে তিব্র আন্দোলনের মাঝে-ও ততকালীন বি এন পি সরকার একদলীয় একটা নির্বাচন করে ফেলে জনগনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে, যদিও মাত্র একমাসের কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করতে হয় সেই সরকারকে।এই একতরফা নির্বাচনের ভালো দিক হলো সে সাংসদে তত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়,মানুষ ভোট দেয় তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে।
বি এন পি ও পায় একশোর উপর সংসদীয় আসন। আবার দুই হাজার এক সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে সংবিধান অনুযায়ী তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়,সেই নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে ছিয়ানব্বইয়ে ভোটে হেরে যাওয়া দল বি এন পি রাজকীয় ভাবে, সংসদের তিনশো আসনের মধ্যে একতৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বি এন পি জামাত জোট তথা চারদলীয় ঐক্য জোট। কিন্তু পাঁচ বছরের তাদের শাসন ছিলো ব্যর্থতায় ভরা,বিশেষ করে নানান নামে জংগী উত্থান ও দেশব্যাপি একসাথে তেষট্টি জেলায় বোমা হামলা ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। একুশে আগষ্ট বিরোধী দলের সভায় হামলা কে করেছে সে বিতর্কে না গেলেও এটা যে তাদের বড় ধরনের ব্যর্থতা তা কে না মানবে! এরপর তত্ত্বাবাধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করা ছিলো তাদের চরম ভুল।

অনেক গুলো ভুল আর ব্যর্থতার ফলস্বরূপ বাংলাদেশে ফিরে আসে ছদ্মনবেশি সেনা সমর্থিত সরকার। তিনবছর এই সরকার দূর্নীতি নির্মূলের নামে দমন নিপিড়নে অতিষ্ঠ জনগণ আবার ভোট দেবার সুযোগ আসা মাত্র আওয়ামীলীগকে বেছে নেয় জাতি। এরপর আওয়ামীলীগ গত পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, এর মাঝে ৩ টি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে…..