ঈদে বাড়ি ফেরা হবে না কুবির নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারদের

লেখক: ফয়সাল মিয়া, কুবি
প্রকাশ: ১ বছর আগে

পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু মানুষ থাকে উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। ঈদের দিনেও কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। চাইলেও ইদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই । বলছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের কথা।

প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানি ইদে বাড়ি যাওয়া হবে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা পরিবারের সাথে দিন কাটাচ্ছে। তবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার কর্মীদের কাজ চলমান আছে।

সবাই যখন ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বাড়িতে অবস্থান করে তখন স্বপ্নের ক্যাম্পাসটাকে আগলে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব আনসার সদস্যদের । কারো কাছে মামা, কারো কাছে ভাই আবার কারো কাছে আঙ্কেল। সর্বক্ষণ দায়িত্ব পালন করে চলছেন তারা। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে থাকলেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা । এ যেন একা রেখে চলে যাওয়া বিচ্ছেদ। পরিবারের বাইরে নিজ কর্মস্থলে একা ঈদ কাটাবেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালে মোট আনসার সদস্য আছে ৪৯ জন। এরমধ্যে ইদের ছুটি পেয়েছেন মাত্র ৮ জন। বাকিরা দিবে ক্যাম্পাস পাহারা। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তারা হয়তো পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না কিন্তু সহকর্মীদের সাথেই কাটবে তাদের ঈদ। এ এক অন্যরকম ঈদ। এক ঈদে যারা বাড়ি ফিরবে অন্য ঈদে তারা ফিরতে পারবে না৷ একজন রোজার ঈদে ছুটি পেলে কোরবানির ঈদে ছুটি পাবেন না। এনিয়ে তাদের আফসোস হলেও অন্য সহকর্মীরা যে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে পারছে এতেই তাদের আনন্দ।

ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হলো তাদের সঙ্গে। এক আনসার সদস্য বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধা। পরিবারের জন্য টাকা ইনকাম করি অথচ তাদের সাথে ঈদ পালন করা হয় না। বাড়িতে বাবা, মা, ছেলে ও মেয়ে আছে। ইচ্ছে করে শুধুমাত্র দুইটা ইদ যেন তাদের সাথে কাটাতে পারি। কিন্তু নিজের দায়িত্ব তো আমাকে পালন করতে হবে । পরিবারের সাথে ইদ উদযাপন করার মধ্যে একটা আলাদা শান্তি আছে। আমি গত বছরও পরিবারের সঙ্গে ইদ উদযাপন করতে পারি নাই। আগামী ইদে বাড়ি যাওয়া হবে কি না তাও জানি না।

 

আরেক নিরাপত্তা কর্মী বলেন , এইখানে এটা আমার প্রথম ঈদ, মন চাই বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে ঈদ করতে। মায় কইছিলো বাড়ি যাবার জন্য কিন্তু মাকে মোবাইলে বলছি এবার আমার ছুটি নেই ঈদে আসা হবে না। বলছিলেন, ছুটি না থাকলে যাওয়া যায় না, ঝামেলা হয়।

এবার ঈদে পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত ৪১ জন আনসার সদস্য। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুই ঈদ। এই দুই ঈদে প্রত্যেকেই চায় পরিবারের সাথে থাকতে। কিন্তু কাঁধে তাদের রয়েছে দায়িত্ব। এই দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাখছে নিরাপদ। তাদের এই ত্যাগই মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একে অপরের জন্য। কেউ একজন সুখ পেতে হলে অপর আরেকজনকে ত্যাগ করতেই হয়।